ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
অর্থমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

জনভোগান্তিকর কিছু বাজেটে রাখবেন না

আসছে বাজেটে জনভোগান্তি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজেটের রূপরেখা নিয়ে গতকাল সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় তাঁর সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে প্রয়োজনে ব্যাংক, শেয়ারবাজার, শ্রমবাজারসহ সামগ্রিক আর্থিক খাতের সংস্কার আনারও নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী মোটা দাগে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তিনি জানতে চান, রাজস্ব আদায় কমার কারণ কী? রাজস্ব ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানুষের জীবন ধারণের ওপর কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।’

প্রয়োজনে আর্থিক খাতে সংস্কার আনার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তবে যে খাতেই যেকোনো ধরনের সংস্কারই আনা হোক না কেন, তা হতে হবে জনকল্যাণ, জনস্বস্তি ও জনহিতকর। মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে কোনো ধরনের সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায় বাড়বে।

প্রেজেন্টেশনে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছর যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তাতে করের বোঝা কোনোভাবেই বাড়বে না। তবে করের আওতা বাড়বে। অন্তত এক কোটি মানুষকে নতুন করে করের আওতায় আনা হবে। যার মাধ্যমে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে করপোরেট কর হার কমানো হবে। সেই সঙ্গে টানা প্রায় ১০ বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিকরণ চালু করা হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয় পক্ষকেই জোরদার তৎপরতা চালাতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারিভাবে যদি কেউ নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে তাহলে তাদের বিভিন্ন রেয়াতি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কৃষি খাতের বাম্পার ফলন আর উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। আসন্ন বাজেটে ৮.২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ধরা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, আগামী বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। যার কিছু প্রতিফলন থাকবে আগামী বাজেটেও। এ জন্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে। কর্মসংস্থানের জন্য মানুষকে যেন শহরে ছুটে আসতে না হয়, সে জন্য গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কেন্দ্রীভূত কার্যক্রম মফস্বল এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

সূত্র আরো জানায়, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫.৫ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আসন্ন বাজেটের মোট আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮.১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

আসন্ন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) দুই লাখ সাত হাজার ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এডিপিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে যোগাযোগ খাতকে। একইভাবে গ্রামীণ জনপথের উন্নয়ন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রসারকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে আসছে বাজেটে।