ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হুজুগে লবণ কিনে এখন আফসোস

রাজধানীর কাফরুলের বাসিন্দা আলী আসগর মিয়া গুজবে কান দিয়ে ১০ কেজি লবণ কিনেছিলেন, কিন্তু যে গুজব ছিল তার যে ভিত্তি নেই সেটা বুঝতে তাঁর দেরি হয়নি। গতকাল বুধবার গুজব থিতিয়ে পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক তখন তিনি আফসোস করছিলেন।

আগের দিন মঙ্গলবার বেশি দামে অহেতুক বেশি লবণ কেনার বিষয়টি জানিয়ে আলী আসগর কালের কণ্ঠকে বলেন, গুজবে কান দিয়ে লোকসান হলো তাঁর। আর লাভ হলো ব্যবসায়ীর। তিনি স্বীকার করেন যে গুজবে কান দেওয়া ঠিক হয়নি।

লবণের দাম বেড়ে যাবে, পাওয়া যাবে না—এমন গুজবের সূত্রপাত সোমবার রাতে। এরপর গুজবে ভর করে লবণের দাম বেড়ে যায় লাফিয়ে লাফিয়ে। ঢাকাসহ সারা দেশে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। চাহিদার তুলনায় বেশি বেশি কিনছিল ক্রেতারা। সারা দিন মানুষের মুখে মুখে ছিল লবণ নিয়ে নানা কথা। তৈরি হয়েছিল অস্থির পরিস্থিতির। সেই পরিস্থিতি এক দিনের মাথায় স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয় সরকার। সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে যে ব্যক্তি প্রথমে ফেসবুকে লবণ নিয়ে গুজব ছড়িয়েছিলেন তাঁকেও চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা। যেকোনো সময় ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দ্রুত লবণ সমস্যার সমাধানের জন্য দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন প্রত্যেকে মাঠে কাজ করেছে। সারা দেশে মাইকিং করা হয়েছে। গণমাধ্যমও ফলাও করে প্রচার করেছে। ফলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে যে এটা গুজব। আর এসব কারণেই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যারা গুজবের সৃষ্টি করে দেশ অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারা লবণ নিয়ে বাজার পরিস্থিতি অস্থির করেছিল তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া লবণ ব্যবসায়ীরা মজুদ করে সংকট তৈরি করছে কি না সে বিষয়েও নজরদারি করছে সিআইডি।’

লবণের গুজব বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, গতকাল একেবারে উল্টো চিত্র ছিল। আগের দিন যে ক্রেতা দৌড়াদৌড়ি করে বেশি দামে লবণ কিনেছিল সেই ব্যক্তিই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আফসোস করছে। এখন সেই লবণ তারা কী করবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে।

যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকার মুদি দোকানি সামসুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকার এক লোক গতকাল দুপুরে আট কেজি লবণ বিক্রি করতে নিয়ে আসে। তিনি সেই লবণের দাম বলেছেন ২০ টাকা কেজি। পরে সেই লোক লবণ নিয়ে ফিরে যায়।

মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের জননী স্টোরের মালিক এম এ সামাদ খান বলছিলেন, ‘মঙ্গলবার দোকানের সব লবণ বিক্রি হয়ে গেছে। আমি সঠিক দামেই বিক্রি করেছি। এই মুহূর্তে আমার দোকানে লবণ নেই। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আশা করছি, কালকের মধ্যে আমার দোকান থেকে লোকজন লবণ কিনতে পারবে।’

হাতিরপুল বাজারের মিলন স্টোরের কর্মচারী শহীদ মিয়া জানালেন, মঙ্গলবার হঠাৎ মানুষ লবণ কিনতে ভিড় করছিল। ভালো কম্পানির লবণ সব সময়ের মতো ৩৫ টাকা আর অন্য কম্পানিগুলোর লবণ ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তাঁরা।

বিভিন্ন জেলায়ও ছিল রাজধানীর মতো চিত্র। রংপুরের পীরগাছার বাসিন্দা আফসার আলী কালের কণ্ঠকে বলছিলেন, তিনি ৮০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি লবণ কিনেছিলেন। তখন নিজেকে তিনি সৌভাগ্যবান মনে করেছিলেন। এখন তিনি লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছেন না।

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় মঙ্গলবার রাতে বেশি দামে লবণ বিক্রি করছিলেন আবদুর রাজ্জাক নামের এক দোকানি। হৃদয় মিয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানান। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজ্জাককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ তথ্যদাতাকে দেওয়া হয়।