ঢাকা, শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কর্ণফুলীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে গতি নেই

প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণের প্রস্তাব

কর্ণফুলী নদীর বহুল প্রত্যাশিত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে গতি নেই। গত আড়াই বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৩১ শতাংশ। মাঝপথে এসে ব্যয় বেড়ে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ২৫৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ব্যয় ৪৪০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে প্রস্তাবটি বুয়েটে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে কাজে গতি ফিরবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের আমদানি-রফতানির ৯০ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। আর দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরটি কর্ণফুলী নদীর নাব্যতার ওপর নির্ভরশীল। বন্দরের জেটিসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব স্থাপনাই কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। বন্দরের গতিশীলতা বজায় রাখতে কর্ণফুলীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের দাবি দীর্ঘদিনের।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি প্রকল্প’ বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের মে মাসে নৌবাহিনীর সঙ্গে বন্দরের চুক্তি হয়। নৌবাহিনী পরে ই-ইঞ্জিনিয়ার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।

বর্তমানে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানটি খনন কাজ করছে। প্রকল্পের সময়সীমা চার বছর। এরইমধ্যে প্রায় আড়াই বছর সময় পার হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নদীর গভীরতা চার মিটার বাড়ার পাশাপাশি পলি জমে অচল হয়ে পড়া বন্দরের ৪০০ মিটার লাইটার জেটিও সচল হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনেও প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্পের কাজ শুরুর পরই খনন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। কারণ, ড্রেজার মেশিন ঠিকভাবে কাজ করছিল না। এর কারণ পলিথিন। বিভিন্ন খাল হয়ে পলিথিন ও অন্যান্য কঠিন বর্জ্য নদীর তলদেশে জমে গেছে। বারবারই পলিথিনে আটকে যাচ্ছিল ড্রেজার মেশিন। এমন পরিস্থিতিতে চীন থেকে আনা হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ৩১ ইঞ্চি ব্যাসের একটি সাকশন ড্রেজার।

আশা করা হয়েছিল, এই ড্রেজার যুক্ত হলে গতি আসবে খনন কাজে। কিন্তু ছোট আকারের ড্রেজারের মতো এটিও পলিথিনের স্তর খনন করতে ব্যর্থ হয়। এতে বিপাকে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প আংশিক সংশোধন করা হয়। অবশ্য এরইমধ্যে যতটুকু ড্রেজিং হয়েছে, এতেই সদরঘাটের চারটি লাইটার জেটি ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, সংশোধিত প্রকল্পের বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কিছু মতামত দিয়েছে। সেই অনুযায়ী কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান বুয়েটকে আরডিপিপি চূড়ান্ত করে পাঠাতে বলা হয়েছে।

ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘পলিথিনের কারণে ড্রেজিং ব্যাহত হচ্ছে। সে জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নৌবাহিনী সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বুয়েটে। সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা। আগে ৪২ লাখ ঘনমিটার বালি উত্তোলনের কথা ছিল। এখন তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ লাখ ঘনমিটার। আরডিপিপি-তে প্রতি ঘনমিটার বালির উত্তোলন ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭০ টাকা।’

তিনি জানান, সম্প্রতি প্রকল্প যাচাই কমিটির একটি সভা হয়েছে। তাতে নৌ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ব্যয় কমাতে বলা হয়। সংশোধিত প্রস্তাবে বিদেশ থেকে বড় আকারের ২টি ড্রেজার এনে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে দেশীয় ড্রেজারের সংখ্যা বাড়িয়ে ব্যয় কমানো যায় কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহে বুয়েটের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে। এরপর তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অনুমোদন পাওয়া গেলে সংশোধিত প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। তবে প্রকল্পটির কাজ থেমে নেই। প্রতিদিন গড়ে ৬-৭টি ড্রেজার কাজ করছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে ঠিক যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা ছিল পলিথিনের প্রতিবন্ধকতায় তা হয়নি। এ ছাড়া করোনার কারণে কয়েক মাস কাজ হয়েছে ধীরগতিতে।

ব্যয় বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বন্দরের এই কর্মকর্তা বলেন, আগে প্রকল্প যেভাবে তৈরি করা হয়েছিল, তাতে ড্রেজারের মাধ্যমে খনন করে পাইপের সাহায্যে বালি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার কথা ছিল। কিন্তু নদীর তলদেশে পলিথিনের কারণে সেই পদ্ধতিতে কাজ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় গ্রেভ ড্রেজারে বালু তুলে তা বার্জে বোঝাই করতে হচ্ছে। তারপর অন্য জায়গায় নিতে হচ্ছে। সেখান থেকে আবার অন্য কোনো যানবাহন ব্যবহার করে বহন করতে হচ্ছে বালি। এসব কারণসহ আরও কিছু কারণে ব্যয় বাড়ছে।