ঢাকা, সোমবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শরীয়তপুর ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাব বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে পিঁয়াজ, রসুনসহ মসলা জাতীয় ফসলী মাঠ

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে দেশের স্থলভাগে দুইদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি ঝড়ছে। শরীয়তপুরে এ বছর পিঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, কালোজিরাসহ, মশলা জাতীয় রবিশস্য চাষ হয়েছিল ২ হাজার ৩৩৭ হেক্টর জমিতে। আমন ধান চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার ২৩৭ হেক্টর জমিতে। মশলা জাতীয় রবিশস্য বেশিদিন পানির নিচে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। ঘুর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে দুইদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি না থামলে মশলা জাতীয় ফসলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আমন ধান যা চাষ হয়েছে, তার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ ঘরে তুলে নিয়েছে কৃষক। বাকি ৪০ ভাগ এখনও মাঠে। এই ৪০ ভাগ আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে শরীয়তপুরের আমন ধানসহ মশলা জাতীয় রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তবে বৃষ্টির পানি অন্যত্র চলে গেলে ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। মশলা জাতীয় রবিশস্যের বীজ ও চারা সাধারণত চার দিন থেকে এক সপ্তাহ পানির নিচে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলার ফসলী মাঠে ইতোমধ্যে পানি জমিয়ে মশলা জাতীয় ফসলগুলো তলিয়ে গেছে।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।

জেলার নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘুর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা জুড়ে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিতে পাকা আমন ধানসহ মশলা জাতীয় রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, কালোজিরা, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পিঁয়াজ ও রসুন চাষীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিঁয়াজ, রসুনের বীজ থেকে মাটি ফুঁড়ে চারা গজাতে দেখা গেছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে থেকে। মিধিলির প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টির জমাট বাঁধা পানিতে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বৃষ্টি এত বেশি হয়েছে যে, ফসলের চাঁরা মাটি থেকে উপড়ে গিয়ে পানিতে ভেসে এক জায়গায় একত্রিত হয়ে গেছে। ঋণ করে এসব ফসল চাষ করা কৃষকদের পথে বসতে হবে এখন।

নশাসন এলাকার কৃষক হাকিম মিয়া বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বেশি লাভের আশায় পিঁয়াজ ও রসুন চাষ করেছিলাম। তিন চারদিন আগে চারা গজিয়েছে আমার জমিতে। সেই চারাগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। ভেসেও গেছে অনেকটা। কিস্তির টাকা শোধ করব কীভাবে এখন আমি? ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আমাকে পথে বসিয়ে দিয়ে গেল।

নড়িয়া উপজেলার মুক্তারের চর ইউনিয়নের কৃষক রব মাদবর বলেন, হঠাৎ করেই গতকাল থেকে বৃষ্টি নামায় আমার চাষ করা কালোজিরা,ধনিয়া ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মিধিলি নামে নাকি ঘুর্ণিঝড় এসেছে। সেই ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হয়ে আমার জমি এখন পানির নিচে। বৃষ্টি শেষ হলে আমাকে আবার নতুন করে বীজ রোপন করতে হবে।

সখিপুর এলাকার কৃষক রুহুল আমিন বলেন, গতকাল সকালে ফসলের জমিতে গেছিলাম কেমন চারা গজিয়েছে তা দেখতে। হঠাৎ করেই বৃষ্টি নামল। বৃষ্টিতে আমার ফসলের জমিতে পানি জমে গেছে। এই পানি নদী বা খালে নামতে সময় লাগবে। কিন্তু এখন আবার বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। আমার পিঁয়াজ, রসুন সব শেষ হয়ে গেল।

আনোয়ার সরদার বলেন, কৃষক আমার আমন ধান ঘরে তুলতে পারেনি শ্রমিক সংকট। মিধিলির বৃষ্টিতে আমার ধানগুলো এখন পানির নিচে। ঋণ করে আমন ধান চাষ করেছিলাম। এখন আমি ঋণ দেব কীভাবে সেই চিন্তায় আছি।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, শরীয়তপুরে দুইদিন ধরে ঘুর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি গুলো ফসলের মাঠ থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। আমন ধান বেশিরভাগ কৃষকরা ঘরে তুলেছে। কিছু অংশ বাকি রয়েছে।বৃষ্টিতে মশলা জাতীয় ফসলগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।