
বিকেল গড়াতে ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের মাঠ ঢেকে যায় নীল রংয়ের কাভারে। ফ্লাড লাইট না জ্বললেও জায়ান্ট স্ক্রিনসহ স্টেডিয়ামের নানা লাইটের আলোতে নীলাভ আভা তৈরি হয়। সন্ধ্যা নেমে যত রাতের দিকে যাচ্ছে তৈরি হচ্ছে অপরূপ দৃশ্য। দুই পাশে গ্রিন গ্যালারি আর দুই পাশে অবকাঠামোতে স্টেডিয়ামটি এমনিতেই দেখতে অনিন্দ্য সুন্দর।
Google news
ক্যান্ডির এই মাঠেই হাইব্রিড মডেলের এশিয়া কাপের পর্দা উঠতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় মুখোমুখি হবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করতে চায় সাকিব আল হাসানের দল। এশিয়া কাপের আগে নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়া সাকিবের সামনেও একটি বড় চ্যালেঞ্জ বটে।
তামিম ইকবালের অবসর, ফিরে আসা, আবার নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া; সবমিলিয়ে এই টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক প্রকার এসিড টেস্ট। প্রায় সাড়ে তিন বছর নেতৃত্ব দেওয়ার পর ঠিক এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আগে তামিমের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া অনেকেই ভালো চোখে নেননি। তামিমের বিষয় ছাড়াও টুর্নামেন্টের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ইনজুরির শঙ্কা।
লিটন দাস জ্বরের ঘোরে ছিটকেই গেছেন এশিয়ার বিশ্বকাপ থেকে। পরিবর্তে উড়ে এলেন এনামুল হক বিজয়। ডানহাতি টপ অর্ডার আর কনকাশন সাব হিসেবে উইকেটকিপিংয়ের ভাবনা থেকে বিজয়কে উড়িয়ে আনা। সব মিলিয়ে একটি জয় টাইগার শিবিরে এনে দিতে পারে স্বস্তির নিঃশ্বাস কিংবা প্রশান্তির ছোঁয়া।
সাকিবও এক প্রকার বার্তা দিয়ে দিয়েছেন দলকে। জিততে হলে তিন বিভাগেরই ভালো করা চাই। ব্যাটিং-বোলিং যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন গুরত্বপূর্ণ ফিল্ডিংও। তাইতো বুধবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের চাওয়া, ‘আসলে আমি এক বিভাগের ওপর নির্ভর করে জিততে চাই না। প্রতিটা বিভাগ যদি ভালো করি, পেস বোলিং হতে পারে, ব্যাটিং হতে পারে, স্পিন বোলিং হতে পারে, ফিল্ডিং হতে পারে। চারটা জায়গাতেই ভালো করতে পারলে ভালোভাবে জিততে পারব। অলরাউন্ড ক্রিকেট খেলতে চাই। সব দিক থেকেই আমরা ওদের থেকে ভালো খেললে জিতব।’
এই ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেকের অপেক্ষায় তানজিদ হাসান তামিম। কন্ডিশন অনুযায়ী ৭ নাম্বারে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করলে অভিষেক হতে পারে শামীম পাটোয়ারিরও। এমন আভাস দিয়েছেন স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ। জানিয়েছেন একাধিক অভিষেকও হতে পারে। সবমিলিয়ে পাল্লেকেলের উইকেটে দেখা যেতে পারে রান উৎসব। তিন পেসারের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলতে পারেন নাসুম আহমেদ। এই বাঁহাতি স্পিনার খেললে অবশ্য শামীমের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানদের দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে ম্যানেজমেন্ট। ম্যাচের আগের দিন ব্যাট হাতে বেশ ঘাম ঝরিয়েছেন তাসকিন আহমেদ-মোস্তাফিজুর রহমানসহ নাসুমরা। মোস্তাফিজের ইনজুরি শঙ্কা থাকলেও তিনি শেষ প্রস্ততির দিন বোলিং-ব্যাটিং দুটোই করেছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রস্তুত লঙ্কাবধের মিশনে।
এদিকে ইনজুরির কারণে হাসারাঙ্গাসহ সামনের সারির বেশ কয়েকজন বোলার ছিটকে গেছেন এশিয়া কাপ থেকে। হাসারাঙ্গাদের মুখোমুখি না হওয়া বাংলাদেশের জন্য অবশ্য বড় স্বস্তির। বাংলাদেশও অবশ্য ঘরের মাঠে রিস্ট স্পিনারের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। চেন্নাই থেকে নেট বোলার উড়িয়ে নিয়ে এসে অনুশীলন করেছিলেন মুশফিকুর রহিমরা। হাসারাঙ্গারা না থাকায় সাকিব নিজেদের বোলিংকে এগিয়ে রেখেছেন, তবে সতর্কতাও দিয়েছেন, লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ খেলায় সবাই ফর্মে আছে। আবার তাদের মাটিতে খেলা হওয়ায় তাদের হারানো সহজ হবে না।
গতবার প্রথম ম্যাচ হেরে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শানাকার দল। এবার নিজেদের মাঠেও চাপমুক্ত থেকে খেলার কথা জানিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক। ইনজুরিতে পরীক্ষিত ক্রিকেটাররা ছিটকে গেলেও তিনি আত্মবিশ্বাস রাখছে তারুণ্যের উপর।
‘আমাদের তো নিয়ন্ত্রণ নেই এতে। যারা মিস করছে তাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। হাসারাঙ্গা, চামিরা, মাদুশঙ্কার মতো খেলোয়াড়। এরপরও আমাদের ভালো ও অভিজ্ঞ দল আছে। আমি নিশ্চিত টুর্নামেন্টে ভালো করতে ভালো একটা অবস্থানে আছি আমরা। টুর্নামেন্ট খেলতে মুখিয়ে আছি’-এভাবে বলেছেন শানাকা।
ইনজুরিতে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা মুখিয়ে আছে ঘরের মাঠে দারুণ শুরুর জন্য। অন্যদিকে অতিথি বাংলাদেশের চাওয়া লঙ্কাবধ করে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণের। সাকিবের বিশ্বাস, সেরাটা খেলতে পারলে ক্যান্ডিতে উড়বে লাল সবুজের বিজয় পতাকা।