
তবে, সবার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম এবং বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থী চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন। বন্দর নগরীর ভবিষ্যৎ নগর পিতার পদে এই দুজনের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
অন্যান্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের এম এ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)।
পুনঃ তফসিল অনুযায়ী শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরের পর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন এই দুই মেয়র প্রার্থী। ফলে কর্মতৎপরতা ফিরতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়েও।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থগিত থাকা চসিক নির্বাচন। করোনা মহামারিতে চসিকের সংরক্ষিত আসনের এক কাউন্সিলরসহ চার কাউন্সিলর মারা যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট চারটি ওয়ার্ডে নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এসব ওয়ার্ডের প্রার্থীদের শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পরপরই মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটের মাঠে নেমেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।
নগরের বহদ্দারহাটের ঐতিহ্যবাহী বহদ্দারহাট জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। পরে তিনি ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ ও ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ড থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গণসংযোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার অবদানে চট্টগ্রাম এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রাকে অধিকতর মসৃণ ও গতিশীল করতে নৌকায় আপনাদের ভোট প্রত্যাশা করছি।’
ctg-(2).jpg
তিনি বলেন, ‘পাহাড়, সমতল, সাগর, নদীর অপূর্ব সমাহারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অর্থনীতির অপার সম্ভাবনাকে জাতির জনক ও তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। আর কেউ সেভাবে চট্টগ্রামকে মূল্যায়নে কেবল ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, বরং চট্টগ্রামকে অবহেলাই করেছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আজম নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, আওয়ামী লীগ নেতা সামশুল আলম, মহানগর যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদসহ পৃথকভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা।
চট্টগ্রাম নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী , ‘নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগর হিসেবে গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। ৪১ ওয়ার্ডে ৪১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, মাঠ করার পরিকল্পনা আছে।’
এদিকে জুমার নামাজ শেষে হযরত আমানত শাহ (রা.) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। পরে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বহর নিয়ে তিনি নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় সমাবেশ করেন।
এ সময় প্রশাসন ও ইসিকে চসিক নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা সমুন্নত রাখতেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বিগত নির্বাচনগুলোতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট চুরির যে মহোৎসব দেখেছে তাতে ভোটাররা আতঙ্কিত। তাই প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জনগণ ভোট কেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে এই নির্বাচন কমিশন কবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এবং ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে অবশ্যই ধানের শীষের বিজয় হবে।’
ডা. শাহাদাত হোসেন , ‘চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। তাই জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানি থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং কর্ণফুলী তীরে কালুরঘাট পর্যন্ত প্রশস্ত রাস্তা, সুউচ্চ বেড়ি বাধ ও আধুনিক সুইচ গেট নির্মাণের মাধ্যমে জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ ও নতুন খাল খননের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করা হবে।’
তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে নগরবাসীর সেবার মান বৃদ্ধি করে তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার ইতিবাচক উন্নয়ন সাধন করে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে চট্টগ্রাম নগরকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানের জন্য অবকাঠামো সৃষ্টি করা হবে।
এদিকে চসিক নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে গণসংযোগ শুরুর দিন থেকে মাঠে নেমেছেন ১৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, শুক্রবার থেকে ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি প্রতিপালন ও অপরাধ রোধে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ করা হলো।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ১৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছেন। এছাড়া ১৪ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে কোন কর্মকর্তা কোন এলাকায় কাজ করবেন, সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’