ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জুমাতুল বিদা আজ

আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ২৮ তারিখ। আজ জুমাবার। এটাই এ বছরের রমজানের শেষ জুমা। তাই এ দিনটি জুমাতুল বিদা নামে আখ্যায়িত। অবশ্য অভিধাটি পরিচিত হয়েছে ইদানীংকালে। নিকট অতীতেও জুমাতুল বিদা পরিভাষার ব্যবহার কিংবা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করার নজির পাওয়া যায় না। তবে মৌলিক চেতনা ও ভাবধারা বিবেচনায় দিনটি গুরুত্বের অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত থাকতে পারে না।

সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর তুলনায় জুমার দিনের বৈশিষ্ট্য, রমজান মাসে তাতে মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং রমজানের শেষ প্রান্তের বৈশিষ্ট্য- এ তিনের সমন্বয়ে এ দিনটির আলাদা মর্যাদা প্রমাণিত হয়। উম্মতে মুহাম্মদির জন্য সপ্তাহের প্রতিটি দিনেই ইবাদতের বিধান রয়েছে। জামায়াতের সাথে বা মসজিদে সমবেত হয়ে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা মুসলমানদের প্রাত্যহিক কর্তব্য। তবুও সপ্তাহের একটি দিনে আরো বড় আকারে সম্মিলিত ইবাদত বা জুমার নামাজের বিধান মুসলিম উম্মাহর স্বাতস্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য যেমন বাড়িয়ে দেয়, তেমটি সামাজিক ও সামষ্টিক পর্যায়ে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে পরিবেশ তৈরি করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইরশাদ অনুযায়ী প্রত্যেক নবীর উম্মতকে সপ্তাহের একটি দিন বেছে নিতে বলা হয়েছিল সামষ্টিক ইবাদতের জন্য। ইহুদিরা শনিবার ও খ্রিষ্টানরা রোববারকে বেছে নেয়। কিন্তু মুসলমানরা বেছে নেয় শুক্রবারকে। আসলে এটাই আল্লাহ তায়ালার পছন্দ। সেটাই বেছে নেয়ায় এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।

 

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- শ্রেষ্ঠ দিন জুমার দিন। এ দিনে হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে বসবাস করতে দেয়া হয়েছিল। এ দিনেই তাঁকে সেখান থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। আবার কেয়ামতও হবে জুমার দিনে। মোটকথা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ দিনের সাথে জড়িত। ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম’- উম্মতে মুহাম্মদির শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা সংবলিত সূরা মায়েদার এ তিন নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়েছিল ৯ জিলহজ জুমার দিনে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এক ইহুদি পণ্ডিত বলেছিলেন- এমন একটি আয়াত যদি আমাদের প্রতি নাজিল হতো তাহলে আমরা তা নাজিল হওয়ার দিনটিকে ঈদ হিসেবে পালন করতাম।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বললেন- এটা আমাদের ওপর নাজিল হয়েছে আমাদের দুটি ঈদের দিনে- জুমা ও আরাফা। অর্থাৎ জুমার দিন এ উম্মতের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই পায়। সেই মুহূর্তটি কখন আসে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। লাইলাতুল কদর ও ইসমে আ’জমের মতো জুমার দিনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তও গোপন রাখা হয়েছে। তবে দুটি সময়ের ব্যাপারে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে- ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে ওঠেন, তখন থেকে জুমার নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এবং ওই দিন আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যস্ত।

মোট কথা সাধারণভাবে জুমার দিনের এসব গুরুত্ব মাহাত্ম্য রয়েছে। রমজান মাসের কারণে এ মাহাত্ম্য অনেকগুণ বেড়ে যায়- যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর রমজানের শেষভাগের প্রতিটি দিনই স্মরণ করিয়ে দেয় বহুগুণ ছওয়াব লাভের সুযোগ চলে যাচ্ছে বলে।

শেষ জুমার দিনটি যেন আরো জোরালো ভাষায় উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করে মুমিন বান্দাদের তওবা ইস্তেগফারে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অবারিত ধারায় সিক্ত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ যারা হাতছাড়া করে, তাদের জন্য দুঃখ করা ছাড়া কী থাকতে পারে? তাই জুমাতুল বিদা সতর্ক বার্তা ঘোষণার দিন। আরেক বিচারে তা ঈদুল ফিতরের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।

সিয়াম সাধনার মাস সফলভাবে সম্পন্ন করার শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়াও একটি শুভ আলামত। তাই আল্লাহ তায়ালার অপার রহমত ও অনুগ্রহের অধিকারী হওয়ার এবং পাপরাশি থেকে পাকসাফ হয়ে ঈদের আনন্দ ভোগের সুসংবাদ ঘোষণা হতে থাকে রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে। এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনের মূল্যায়ন করা ও সদ্ব্যবহার করা রোজাদারদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।