ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হলি আর্টিসানের মতো হামলার সক্ষমতা জঙ্গিদের আর নেই

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, হলি আর্টিসানের পর শোলাকিয়া ঈদ জামায়াত বাদ দিলে সিলেটে একটি সেকেন্ডারি অ্যাটাক ছাড়া আর কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। এখন হলি আর্টিসানের মতো আর কোনো হামলার সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই।

রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিসানে নৃশংস জঙ্গি হামলার তৃতীয় বছরে জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থা ও সক্ষমতা সম্পর্কে রোববার (৩০ জুন) তিনি এসব কথা বলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিসানের পর একই কায়দায় আরও কয়েকটি সহিংস ও নৃশংস হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। তবে আমাদের ইন্টেলিজেন্স তথ্যের মাধ্যমে, প্রি-অ্যাক্টিভ অপারেশনের মাধ্যমে, প্রো অ্যাক্টিভ ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে তাদের সেসব পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হয়েছে। বিস্ফোরকসহ জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে জঙ্গিদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দেয়া হয়েছে। হলি আর্টিসানে হামলার পর দেশে জঙ্গিবাদ বিরোধী ঘৃণা জন্মেছে। সবাই উগ্রবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, হলি আর্টিসান হামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। জীবিত ৮ জঙ্গির বিরুদ্ধে ও বিভিন্ন জঙ্গি অভিযানে নিহত ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। জীবিত ৮ জনের মধ্যে দুজন পলাতক ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিল করার সময় পর্যন্ত ২ জন গ্রেফতার না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে পরবর্তীতে র্যাবের হাতে ওই দুজন গ্রেফতার হওয়ায় পরোয়ানার বদৌলতে তাদেরকেও গ্রেফতার দেখানো হয়। এর মাধ্যমে সবাই গ্রেফতার রয়েছেন। পরবর্তীতে আরও কারো নাম তদন্তে বেরিয়ে আসলে তাদেরকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিসান হামলার পরপরই শোলাকিয়া ঈদ জামায়াতে হামলার চেষ্টা হয়েছিল। দুজন সন্ত্রাসী আটকের পর এই সংগঠনের যে কাঠামো ছিল তা ভেঙে যায়। কারণ, হলি আর্টিসানের পর একই কায়দায় আরও কয়েকটি সহিংস ও নৃশংস হামলার পরিকল্পনা ছিল।

অনেকগুলো ঘটনা রুখে দিয়েছেন। অনেক জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে। অনেকে নিহত হয়েছেন। তবে জঙ্গিদের নিভৃত ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও নিহ্নিত করা যায়নি বলেও বলা হচ্ছে। তাহলে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কি বাংলাদেশ আবারও জঙ্গি হামলার মুখোমুখি আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্টার টেররিজম প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে অনেক সময় জঙ্গিরা প্রভাবিত হয়। এক দেশের ঘটনা আরেক দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। বিশ্বে আইএস পতনের পরও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কোনো কোনো হামলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে সে অবস্থাটা তৈরি হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আবার নিউজিল্যান্ডে হামলার পর ঝিমিয়ে পড়া ও সমর্থক জঙ্গি গোষ্ঠির মধ্যে আমরা আলোড়ন দেখেছি। তারা তাদের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশের চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনা অনুপ্রেরণা দিয়েছে তাদের। কিন্তু তাদের ইনটেনশন থাকলেও আমরা তাদের কাঠামো ক্যাপাসিটি বা ক্যাপাবিলিটি বিপর্যন্ত করে দেয়ার কারণে সফল হয়নি।

জঙ্গিদের আমরা দমন করতে পারলেও জঙ্গিবাদ মতাদর্শে বিশ্বাস করে কিংবা উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তি এখনও সমাজে বিদ্যমান। তারা অনুকূল পরিবেশ পেলে কিংবা কখনো সক্ষমতা অর্জন করে, ওই মতাদর্শে বিশ্বাসীদের কারণে ঝুঁকি থাকবে। তবে সেই ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করে তাদের সক্ষমতার মাত্রার ওপর- বলেন তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছি, এখনো দুর্বলই রয়েছে। তাদের প্রচেষ্টা থাকলেও অতীতে পারেনি এবং আমরা যদি সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস রাখি তাহলে আগামীতেও তারা কোনো সহিংসতা বা জঙ্গিবাদি হামলা ঘটাতে সফল হবে না। এ মুহূর্তে ঝুঁকির যে মাত্রা তা খুব বেশি না হলেও বড় ধরনের হামলার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা ঝুঁকি আমরা আপাতত দেখছি না, তবে সতর্ক থাকতে হবে, তারা ছোট ছোট হলেও যেন কোনো হামলার ঘটনা ঘটাতে না পারে।

সাম্প্রতিককালে রাজধানীতে দুটি স্থানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকার সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, পৃথক ওই দুটি ঘটনায় তদন্তে আইএস বা জঙ্গি গোষ্ঠি কর্তৃক হামলার তথ্য মেলেনি। তবে তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, ওই হামলায় আইএস জড়িত, তাহলেও কিন্তু বুঝতে হবে তাদের সক্ষমতা আর আগের মতো নেই। কারণ, প্রথম ঘটনায় বিস্ফোরক বানানোর যে ধরন, তা বিশেষ শক্তিশালী না।

পুরাতন ও নতুন জেএমবি মিলে হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হলি আর্টিসানে হামলার আগে সারাদেশে জঙ্গি বিরোধী বিশেষ অভিযানও চলেছে। এর পরপরই হামলার ঘটনা। একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট ছিল গুলশানে হামলা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে কি হলি আর্টিসান হামলায় ইন্টেলিজেন্সের ব্যর্থতা?

এমন প্রশ্নে মনিরুল ইসলাম বলেন, ব্যর্থতা ওই অর্থে বলা ঠিক হবে না। আমাদের কাছে কিছু তথ্য ছিল তবে তা সুনির্দিষ্ট নয়। দূতাবাস এলাকায় একটা হামলা হতে পারে বলে ভাসা ভাসা তথ্য ছিল। সে জন্য আমরা নিরাপত্তাও জোরদার করেছিলাম। আমরা যেভাবে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করি সেটাকে একটা প্রসেস করে একটা অ্যাসেসমেন্ট দাঁড় করাই। আবার কখনো কখনো জঙ্গিদের যোগাযোগে নজরদারি বাড়ানো হয়। নিরাপত্তা জোরদার করেছিলাম, চেকপোস্ট ছিল। তবে এ আদর্শের লোকদের ইনটেন্ট ও ক্যাটাবিলিটি বেশি থাকলে এ ধরনের হামলা আসলে প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

আইএসের সাথে উপমহাদেশীয় যে শাখা তার সাথে আমাদের দেশীয় কোনো জঙ্গির যোগাযোগ রয়েছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো সংগঠনের বিস্তার হয়েছে- এটা বলার অবকাশ নেই। নব্য কিংবা পুরান জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো আমরা ভেঙে দিয়েছি। ফলে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা যারা পর্যায়ক্রমে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের দায়িত্বে এসেছিলেন তারা কোনো কোনো অভিযানে নিহত হয়েছেন। কেউ গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাংগঠিনকভাবে তারা আর সংগঠিত নয়। ফলে অবিভক্ত কোনো নেতা আসলে তাদের নেই। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। নব্য জেএমবির সকলের সাপোর্টার বা মনোনীত কেউ নেই। ঠিক ‘লোন উল্ফ’ না হলেও ওই জাতীয় সেল বা স্লিপার সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছে।